বড় শান্ত নদীটি।
কূল ছুঁয়ে ছুঁয়ে বয়ে যায়। শান্ত এক মেয়ে। কাজলকালো তার চোখ। ভীরু ভীরু পায়ে সে
পার হয়ে আসে তার শৈশব, তার কিশোরী বেলা। সমনামী বলেই নদীটির সাথে তার এত ভাব কিনা
কে জানে ! কেন জানি ওর মনে হয় এই নদীর সাথে ওর বড্ড বেশী মিল।
Sunday, December 30, 2018
ঈশ্বর, নদী এবং ভালোবাসা ( সিকিমের লোককথা অবলম্বনে)
বিশাল বরফের ঢালু প্রান্তর। তার হেথায় হোথায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কালচে সবুজ অথবা দুধসাদা পাহাড়ের দল। গভীর খাদে মৃত্যুর হাতছানি বড় স্পষ্ট। বিপদ-সংকুল এই তিস্তা কাংশে হিমবাহের ওপারে গলানো রুপোর ঔজ্জ্বল্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এই অঞ্চলে অবিসংবাদিত দেবতা কঞ্চেন কঞ্চলো।
Wednesday, December 26, 2018
চেনা –অচেনায় (4) চড়াইপাখি বারোটা
‘ডাকছে তোমায় তাই যদি হয়, তাহার কাছে যাও
কাছে গিয়েও আপন ছাড়া, কারেও নাহি পাও।’
ধাঁধা যে কি ধন্দের সৃষ্টি করতে পারে তা কি আগে জানতাম! পরিস্থিতি শিখিয়েছিল - আয়নার ধান্দাবাজি! হ্যাঁ মশাই, নাকের জলে চোখের জলে।
চেনা অচেনায় – (3) টিয়া, টিয়া, টিয়া.......
আমার এই বনধুটির নাম মহারাজ। বনধু হলে হবে কি, এর মত হাড়বজ্জাত টিয়া আমি বাপের জন্মে দেখিনি।
চেনা-অচেনায় (2) হাতী আমার সাথী
তারে আমি চোখে দেখিনি,
শুধু গল্প শুনে
– না:
অল্প নয় অনেক ভালবেসেছি,
তার ছবিতে হাত বুলিয়ে চোখ উপছে জল ঝরিয়েছিও অনেক
– আজও তার কথা হলে গলার কাছে ব্যথা। তার নাম ‘শিউজী’,
বনবিভাগের গর্বের মহাকাল।
চেনা-অচেনায় (1) আর্কটিক টার্ন
বনধু হরেক রকম। কিছু চেনা প্রাত্যহিক দেখাশোনায়, কিছু অন্তরের আন্তরিকতায়। অন্তরমিলের তালিকায় প্রথমেই যার নাম, তাকে সবাই একডাকে চেনে – তার নাম Arctic Tern.
Tuesday, December 25, 2018
বন-জঙ্গল - (৫) – কুয়াশা পর্ব
বন-জঙ্গল - (৪) (হস্তীপর্ব)
ইদানীং বাঁকুড়া – পুরুলিার ছোটনাগপুর
এলাকায় হাতীর উপদ্রব খুব সাধারণ ঘটনা। হাতীর সংখ্যা বেড়েছে, অথচ জঙ্গল না বেড়ে কমে
গেছে। ফলে হাতী খাবারের লোভে প্রায়ই চলে আসে লোকালয়ে। হরেন-বিপিন-আফজলের মাথার ঘাম
পায়ে ফেলে তৈরি ফসল খেয়ে ফেলে; মালতীবালার কলাবাগানের দফা রফা করে। এরা তাই মশাল,
ক্যানেস্তারা নিয়ে হৈ হৈ করে ওদের ভাগায়। কখনো এরা জেতে, কখনো ওরা। মাঝে মাঝে
গ্রামবাসীরা দল বেঁধে চড়াও হয় ফরেস্ট অফিসে। বিক্ষোভ দেখায়, তাতে কিছুটা ক্ষতিপূরণ
হয়ত পায়, কিনতু সমস্যাটার সমাধান হয় না।
বন-জঙ্গল – ৩ সত্যপর্ব – ৩
বাদাবনের মানুষ, বাঘ,
কুমিরের সাথে মিলেমিশে দিব্বি ছিলেন সত্য – হঠাৎ বিভাগীয় বড়কর্তার ডাকে কলকাতা
ছুটতে হল তাঁকে। কি এমন ঘটল, যাতে নিম্নতম অফিসারের খোঁজ পড়ে, সেই জিগ্স পাজল
মেলাবার চেষ্টায় গলদ্ঘর্ম হতে হতে পৌঁছেও গেলেন একসময়।
- “অতীন রায়কে চেনেন ?”
বন-জঙ্গল – ২ সত্যপর্ব - ২
সত্যপ্রিয়কে আজ
আর চেনা যায় না। সুন্দরবনের দীনু নামের গ্রামবাসীটির মৃত্যু তাঁকে আমূল বদলে
দিয়েছে। বাইশ বছরের অনভিজ্ঞ তরুণটি আজ বনবিভাগের অন্যতম দক্ষ ও সাহসী কর্মী।
বনকে ভালবেসে,
তার অধিবাসীদের ভালবেসে সত্যপ্রিয় গত কয়েক বছরে অনেক কিছু শিখেছেন।
বন-জঙ্গল – ১ সত্যপর্ব -১
“কলকাতায় জন্মকম্মো,
জঙ্গলে টিঁকতে পারবেন তো মশাই ?”
সময়টা ১৯৫৫ সালের কাছাকাছি। ফরেষ্ট বীট অফিসারের
চাকরির চিঠিটা পেয়ে যতটা খুশী হয়েছিল সত্যপ্রিয়, জয়েন করতে এসে ততটাই হকচকিয়ে গেছে
বেচারী।
Saturday, December 22, 2018
বৃত্তান্তর
বাস থেকে নেমেই এদিক ওদিক চাইল রাই। সারাটা রাস্তা এই একজনের মুখ ভাবতে ভাবতেই এসেছে। ভাবতে চায়নি, বহুবার জোর করে ভাবনাটা সরিয়ে দিতে চেয়েছে – কিন্তু জানলার হাওয়ায় উড়ে যাওয়া চুলের মতোই মনটা আজ ভারি অবাধ্য হয়ে আছে। ইচ্ছে করেই নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগেই এসেছে সে।
Friday, December 21, 2018
নাগরিক
(১)
-
আমি
বিয়ে করছি।
-
কনগ্র্যাটস!
কিন্তু কাকে?
-
অরুণকে।
-
কেন?
-
কেন,
আবার কি? ওকে ভালোবাসি, তাই।
-
হুম।
কিন্তু অরুণও কি তোকে ভালোবাসে?
পরিত্যক্ত
বাড়িটা জেন দেখতে পায় এক
সান্ধ্যভ্রমণের সময়। রেডমণ্ডের এদিকটা বেশ নির্জন আর
গাছগাছালিতে ভরা। চারপাশের সাজানো গোছানো বাড়িগুলোর মধ্যে এই বাড়িটা অন্যরকম ঠেকল
কেন, সেটা বুঝতেই দাঁড়াল জেন।
লাল বলটা
সকালটা দেখে একেবারেই বোঝা যায় নি,
দিনটা এইরকম ভাবে শেষ হবে। নেহাতই বড়দিনের ছুটি কাটাতে সিকিমে আসা। পাহাড়ে
আবহাওয়াটা এই সময় খুবই সঙ্গ দেয় – আগেও দেখেছে রক্তিম। সিকিমের অর্কিড বা ফার্ণ
দেখতে হলে অবশ্য মার্চেই আসা ভালো। কিন্তু ওই সময় ছুটি পাওয়া ঝকমারির ব্যাপার। তাই
বরফে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘাকেই প্রাধান্য দিয়ে চলে এসেছে ওরা দুই বন্ধু – রক্তিম আর
প্রীতম।
স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়?
এমনিতে
কিছুই বোঝা যায়নি বাইরে থেকে। ওর বয়েসী আর পাঁচটা ছেলের মতোই দীপান সকালে স্কুলে
যায়, দুপুরে বোসেদের পুকুরে ঝাঁপাই জোড়ে, বিকেলে ডাংগুলি কিংবা কাবাডি –
সন্ধ্যাবেলায় আধোঘুমে ঢুলতে ঢুলতে ভুল পড়া বলে মার কাছে বকুনিও খায় রোজ। কখনো কখনো
খুব আনমনে বাগানের গাছপালা জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে কথা বলে বটে, কিন্তু ওটুকু
কল্পনাবিলাস তো সব শিশুরই থাকে। নাঃ, ছেলেটার মধ্যে কোন বিশেষত্ব আছে বলে তো
সুমিতার মনে হয় নি কখনও। বরং তার ছেলে যে কোন অবস্থাতেই মিছে কথা বলেনা – সে
ব্যাপারটায় একটু প্রচ্ছন্ন গর্বই জমে মায়ের বুকে।
বাঁশি
প্রথম বাঁশি শুনেছিল দশ বছর বয়েসে। তার আগে বইয়ের পাতাতে, ছবির মাধ্যমেই পরিচয়। একটুকরো ফুটোওয়ালা বাঁশ নিয়ে এত আদিখ্যেতার যে কি আছে তা ছোট্ট ইমনের মাথায় ঢোকে না। জিনিসটা গোটা হলেও বা না হয় কিছু মানে ছিল!
ফেরা
ফুলশয্যার রাতে
অভী যখন বৌকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘মধুচন্দ্রিমায় কোথায় যেতে চাও,’ – তখন তার পিছনে
নতুন বৌকে ইম্প্রেস করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য ছিল না। প্রশ্নটা শুনে অনিরিনার
মুখটি দশটা হাজার ওয়াটের বাতির মত ঝলমলিয়ে উঠল, দেখে অভীর মনও দুলে উঠল। ‘যেখানে
বলব, নিয়ে যাবে আমায় ?’ সুন্দরী নতুন বৌকে জবাব দিতে গিয়ে পুরুষসিংহ হয়ে উঠল অভী –‘শুধু
বলেই দেখ না !’
দরজার ওপারে
চোখ বুজলেই
আজও সেই ছোট্ট মেয়েটাকে দেখতে পাই। দু’ হাতে বাবা মায়ের হাত ধরে ঝুলতে ঝুলতে ঠাকুর
দেখতে যাচ্ছে। ভীড় শুরু হলেই বাবার কাঁধে। বাবার কাঁধটা কত্তো উঁচুতে! এবার সব
দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তবুও প্যান্ডেল থেকে বেরোলে ঘামে মুখ জবজবে। মা তাড়াতাড়ি আঁচল
দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দেয়। নতুন শাড়ি আর সেন্টের গন্ধে আমার নাকমুখ ভরে ওঠে। আবার
নাচতে নাচতে পথ চলি।
জলশঙ্খ
ছলাৎ
ছল ছলাৎ ছল
গল্প
বলে নদীর জল.....
কেন
কে জানে, আজকাল নদীর ধারে এসে বসলেই তার এই দুটো লাইন মনে পড়ে। বহু চেষ্টা করেও
কিছুতেই মনে করতে পারে না, এটা সে কোথাও পড়েছে না কি তার মনেরই গভীর গহন কোনো কোণ
থেকে উঠে আসছে এই লাইন দুটি? কিছু কি গল্প বলে এই নদী, নাকি এতো জানে বলেই নদী কথা
বলে না.......
কাক বা নারীমন
বিয়ে হয়ে
শ্বশুরবাড়ী এসে গৌরী ভারী মুস্কিলে পড়ল। শ্বশুরমশাই আর বর সুদেব অফিসে বেরিয়ে গেলে
ঘর একদম ফাঁকা। শাশুড়ীমা তো কবে থেকেই ছবি হয়ে ঝুলছেন দেওয়ালে। একা বাড়িতে তার সময়
আর কাটতে চায় না। তার উপরে আরেক জ্বালা বাথরুম বা স্নানঘর। গ্রামের মেয়ে গৌরী।
চিরটা কাল পুকুরে নাইতে যেত। এই মফস্বলের স্নানঘরে তার গা ঘিনঘিনিয়ে ওঠে।
Tuesday, December 18, 2018
পঞ্চকন্যা_(৫) -মন্দোদরী
অহল্যা দ্রৌপদী
কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা।
পঞ্চকন্যা
স্মরেন্নিত্যং মহাপাতক নাশনম॥
*
পঞ্চকন্যার পঞ্চমার নাম মন্দোদরী। এই কন্যাটির জন্য সপ্তকাণ্ড রামায়ণে
বেশি শব্দ ব্যয় করেননি মহাকবি বাল্মিকী। কিন্তু ব্যক্তিত্বের হীরকদ্যুতির প্রভায়
তাঁর এই স্বল্প উপস্থিতিও মনের চোরাকুঠুরিটা আলোয় আলোময় করে তোলে। যত অল্প জায়গা
জুড়েই থাকুন না কেন, রামায়ণ পড়লে এই নামটি মনের মধ্যে শিকড় গেড়ে বসে – আরও হাজার
একটা চরিত্রকে পিছনে ফেলে।
||
মন্দোদরী ||
Saturday, December 8, 2018
পঞ্চকন্যা_(৪) - তারা
অহল্যা দ্রৌপদী
কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা।
পঞ্চকন্যা
স্মরেন্নিত্যং মহাপাতক নাশনম॥
*
এই পঞ্চকন্যা নিয়ে আমার বিস্ময় আর
ফুরায় না। এক তো সেই পুরুষশাসিত যুগে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ দেখে তাবড় তাবড় বীর ও
জ্ঞানী পুরুষেরা চুপ করে বসে থাকেন। স্ত্রীকে হাতি ঘোড়া রথের মতোই বাজি রাখেন
একপঞ্চমাংশের স্বামী। আবার
নিজ শৌর্যের পরিচয় দিতে স্ত্রীকে উদ্ধার করার পরেও তাকে এমনই কটু অপমানজনক কথায়
বিদ্ধ করেন তথাকথিত ঐশ্বরিক পুরোষোত্তম যে, রমণী ধিক্কারে, ঘৃণায় আগুনে ঝাঁপ দেন।
আবার সেই যুগেই এই শ্লোক? দুই মহাকাব্যে এত অজস্র ঋষি মুনি রাজা মহারাজা থাকতে
সর্বপাপ বিনাশ করতে পাঁচজন নারীকে বেছে নিতে হল শাস্ত্রকারদের? কিন্তু কেন?
পঞ্চকন্যা_(৩) - কুন্তী
অহল্যা দ্রৌপদী
কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা।
পঞ্চকন্যা
স্মরেন্নিত্যং মহাপাতক নাশনম॥
*
কথা হচ্ছিল প্রাতঃস্মরণীয়া পাঁচজন
মেয়ের। ভোরবেলায় যাঁদের নাম করলে মহাপাপও বিনাশ হয়। কিন্তু যাঁদের মতো হতে বলেন না
কোন আশীর্বাদকই। এই বৈপরীত্যই বারে বারে আমাকে টেনে নিয়ে গেছে মহাভারতের
মহাসমুদ্রে। প্রতীক ছেড়ে সহজভাবে খুঁজে বেরিয়েছি তাঁদের মানবী সত্ত্বাকে। জানতে
চেয়েছি কোন অপরূপ চরিত্রবলে এঁরা সেই পুরুষপ্রধান যুগেও আপন স্বাতন্ত্র্যে ভাস্বর
ছিলেন।
পঞ্চকন্যা_(২) - দ্রৌপদী
অহল্যা দ্রৌপদী
কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা।
পঞ্চকন্যা
স্মরেন্নিত্যং মহাপাতক নাশনম॥
*
পঞ্চকন্যার
দ্বিতীয়জন দ্রৌপদী। আক্ষরিক অর্থেই
অগ্নিকন্যা। মহাভারতের সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তিত্ব। এক স্বয়ংসম্পূর্ণা ক্ষত্রনারী।
পঞ্চভূতের মধ্যে তেজসরূপিনী এই রমণীর দিকে তাকিয়ে আমার বিস্ময় আর শেষ হতে চায় না।
পঞ্চকন্যা_(১) - অহল্যা
অহল্যা দ্রৌপদী
কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা।
পঞ্চকন্যা
স্মরেন্নিত্যং মহাপাতক নাশনম॥
প্রথম
দর্শনে/শ্রবণেই শ্লোকটি আমার মর্মে গাঁথা হয়ে গিয়েছিল। প্রথম যখন শুনি তখন আমার
বয়েস ষোল। সর্বগ্রাসী পড়ার নেশায় ততদিনে কাশীদাসী মহাভারত, কৃত্তিবাসী রামায়ণ,
পদ্মাপুরাণ ইত্যাদি গেলা হয়ে গেছে। তাই ঠাকুমার মুখে ওই স্তোত্রটা শুনে বেশ চমকে
গিয়েছিলাম। ঠাকুমা সম্ভবতঃ কোন পাঠের আসর থেকে সদ্য শিখে এসেছিলেন। পাপস্খলনের
নিমিত্ত রোজ সকালে আওড়াতেন। আমি আমার চিরকেলে পটপটিয়া অভিধাটি সার্থক করে জানতে
চেয়েছিলাম, - “ হ্যাঁ গো ঠাকুমা, বহুপতি থাকাটা বেশ পুণ্যের কাজ তাইলে, কি বলো?”
Subscribe to:
Posts (Atom)