Tuesday, January 22, 2019

গল্প লেখার গল্প - বইয়ের নাম - ভ্রমি বিস্ময়ে


আমার দিদিমা বলতেন – ঘরে সেনাপতি।
অর্থাৎ যত বড়ফাট্টাই, হম্বিতম্বি, সব ঘরের মধ্যে – পরিচিত, আত্মজন আর বন্ধুবান্ধবদের সামনে। বাইরে বেরোলে নিপাট মুখচোরা। স্নেহের অতিকথন সন্দেহ নেই। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বকবকাতে ভালোই পারি। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে কারো সঙ্গে আলাপ জমানো? ওরে বাবা! সে গুড়ে বড় বড় দানার স্যান্ড।

ফেসবুকের পাতায় যতই কলম চালাই না কেন, ব্যক্তিজীবনে শামুকের মতো গুটিয়ে থাকাতেই আমার আনন্দ। বন্ধুরা মাঝে মাঝেই বই ছাপাতে বলে। আমার সাফ কথা – ছাপবে কে? কিনবে কে? আর কিনবেই বা কেন? এই তিন প্রশ্নের ঘায়ে সবাই পালায়। দু একজন অবশ্য এঁড়ে থাকে – ছাপবেই একদিন। কে ছাপবে জানিনা। কিন্তু ছাপবেই – এ বলে দিলাম।

তা, ভগবান দুটো কান কি আর এমনি এমনি দিয়েছেন? আমিও একান দিয়ে শুনে, ওকান দিয়ে বের করে নিশ্চিন্তে কলম চালাই।

তাই যখন গতবছরের শুরুতে ঋতবাকের সুস্মিতা বসু সিং নিজে থেকে ফোন করে আমার বেড়ানোর গল্পগুলো নিয়ে বই ছাপতে চাইল, তখন সেটা বন্ধুমানুষের রসিকতা  ভেবে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে দেখলাম দারুণ সিরিয়াস। অগত্যা তাকে লেখাগুলো আর কিছু ছবি পাঠিয়ে দিলাম। তারপরে আর কোনো সাড়াশব্দ নেই। ঝোঁক কেটে গেছে ভেবে আমিও নিশ্চিন্তে নিজের খোলের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। ও মা, মাস চারেক পরে আবার ফোন –
-       ছবি দাও। আরও অনেক ছবি।
-       কি – কিসের?
-       আরে বাবা, তোমার ওই লেখার।
-       মানে? তুমি সত্যি ছাপছ? সিরিয়াসলি?
-       ভারি জ্বালাতনে পড়া গেল! ছবি পাঠাও গুগল ড্রাইভে।

সে আবার কি যন্তর রে বাবা! ধরে পড়লাম অগতির গতি সৌরভকে। একটা নতুন জিনিস শেখা হলো। ছবি পাঠাবার পরে আবার কিছুদিন চুপচাপ। তারপর একদিন মেলে বইয়ের সফ্ট কপি এসে পৌঁছাল। অ্যাদ্দিনে ম্যাডাম আমায় চিনে গেছেন। তাই সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপেও হুড়ো লাগালেন।

আরিব্বাস! কপি দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ! নিজের বই বলে বলছি না – বাংলায় এই প্রেজেন্টেশনের কফি টেবিল বুক আমার চোখে আগে পড়েনি। তবে আমার পড়াশোনা যে খুব সীমিত, সেটা আগেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো। এই বইয়ে আমার নাম থাকবে? সিরিয়াসলি? নাঃ, ব্যাপারটা এবার সিরিয়াসলি নিতেই হচ্ছে।

অতএব নামাও প্রিন্ট আউট। চেক করো। দেখো কিছু ভুল ত্রুটি রয়ে গেলো কিনা? ছবিগুলো লেখার সঙ্গে ঠিক ভাবে জুড়লো তো? এইসব একগাদা হ্য়ানোত্যানোতে এবার সত্যই জড়িয়ে গেলাম। এই পর্যায়ে সুস্মিতা আর আমি দুজনেই বারবার যে মানুষটির উদ্দেশ্যে টুপি খুলেছি তাঁর নাম তিমিরবরণ রায়। সুস্মিতার কল্পনা এবং তিমিরবরণের শৈল্পিক সত্ত্বার সৃষ্টি এই বই – “ভ্রমি বিস্ময়ে” কাজের প্রতি কি অসম্ভব ডেডিকেশন যে এই মানুষটির, তা না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আর প্রকাশক সুস্মিতার প্রতিও আমার অকুণ্ঠ ভালোবাসা। ওর ক্রমাগত তাড়া এবং ধমক না থাকলে এ বই প্রকাশিত হতো না। আমার মতো হাড় আলসেকে দিয়ে যে কাজ করিয়ে নিতে পারে তার কৃতিত্বকে ছোট করে দেখার স্পর্ধা আমি অন্ততঃ করি না।

প্রি বুকিংয়ে প্রথম দফায় ছাপানো সব বই নাকি বিক্রি হয়ে গেছে – সুস্মিতা খবর দিল। বইমেলার জন্য ওকে আবার নতুন করে প্রিন্ট করতে হচ্ছে!! আমি অজ্ঞান হতে হতে কোনোমতে সামলে নিয়েছি। তবে বইমেলায় গিয়ে ঋতবাকের ৩৩০ নম্বর স্টলে বইয়ের আরও বিক্রি দেখলে কি হবে সেটা এখুনি বলা যাচ্ছে না।

সে যাই হোক। সাহস সঞ্চয় করে ফেব্রুয়ারির ১, ২, ৩ তারিখে ঋতবাকের ৩৩০ নম্বর স্টলে হাজির থাকব। আপনারা এলে গল্প হবে, চেনাশোনা হবে।
অলমিতি।

দোলা সেন||

Saturday, January 19, 2019

এক যে ছিল ----


বেদনায় ভরে গিয়েছে পেয়ালা –
নিঃশব্দ রক্তক্ষরণ হয়েই চলে বুকের মাঝে, চোখের জল আগুন হয়ে ঝরে, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হয় – ওগো এভাবে আদর দিও না, যত্ন করো না। আগাছাই যদি হয় তাকে তার মতো বাড়তে দাও – সবার সাথে লড়াই করে বাঁচতে দাও

যে যেখানে দাঁড়িয়ে


ট্রেনে একাই যাচ্ছিলেন বিদিশা দেবী। যাচ্ছিলেন ছোট মেয়ের বাড়ী। স্বামী অতনু মারা যাবার পর, দুই মেয়ে আর এক ছেলের কাছে চারমাস করে ঘুরে ঘুরে বর্ষযাপন এখন তাঁর এই ভাল। নাহলে টানা এক বৃদ্ধাকে নিয়ে থাকতে যে সবারই বিরক্তবোধ হয়, ছেলেমেয়েদের সংযত আচরণের ফাঁক দিয়েও সেটা অনুভব করতে পারেন তিনি। তাই নিজেই এই ব্যবস্থা চালু করেছেন

Thursday, January 10, 2019

মুহূর্ত

বাড়ীতে যখন ডলপুতুলের মত একটা ছোট্টো ভাই এল, তখন সব্বার মত রিনিও খুব খুশী হয়েছিল। ছোট ছোট দুবেণী দুলিয়ে ভাইকে কোলে নিতে যেতেই মা বলে উঠলেন, “ওরে এটা বড্ডো ছোট। ওভাবে নিতে নেই। তুই বাবু হয়ে বস দেখি, আমি তোর কোলে দিচ্ছি।

ভালোবাসার জন্য


ভালোবাসার জন্য কতটা পথ হাঁটা যায়,
পার হওয়া যায় কটা দুস্তর নদী,
আর ডিঙিয়ে যাওয়া যায় উঁচু পাহাড়ের সারি?

জানা নেই, তবু সেই বিশ্বাসের বীজমন্ত্র জপতে জপতে মধুজা কাটিয়ে দেয় আরও একটা রাত। এক অসহ শারীরিক, মানসিক যন্ত্রণা ভরা সেই রাত পার করে একসময় দেখা দেয় পূবের লাল আকাশ। সব যন্ত্রণার অবসান। মধুজা বুঝতে পারে  আরও একটি রাত সে ভালোবাসার নামে অতিক্রম করে গেল। আর তাই আরও একটি সুন্দর আলোকিত দিন উপহার পেল উদয়ভানুর কাছ থেকে।

বৃষ্টি এলো

শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে.......

গান নয়, রিংটোন। কিছুদিন হল রোজ দুপুরে একটা অজানা নম্বর থেকে কল আসছে। পুরোনো কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য মৌমিতা ইদানীং অজানা নম্বর থেকে কল এলে ধরতে চায় না।

পুতুল-নাচের-গল্পকথা


-       -  ও মেয়ে, তোর নাম কি ?

-      -  নাম? সে তো একসময় ছিল রীতা মিত্রবড় হলুম যখন, তখন হয়ে গেল রীতা রায়, তারও কিছুদিন পরে মিসেস রায়।

-       যাক্গে, মরুগ্গে, - তোর বাড়ী কোথায় ?

Monday, January 7, 2019

মায়ের আকাশ


বিশাল বিমানটা সোনাইকে নিয়ে দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টারম্যাক ছাড়িয়ে ওপরে ওঠামাত্রই ব্যালকনিতে দাঁড়ান রোমির বুকের ভিতর থেকে একটি শব্দই বের হয়ে এল – যাঃশরীরের ভিতর সুতীব্র যন্ত্রণায় শুরু হল এক অদৃশ্য রক্তক্ষরণ – ঠিক যেমন হয়েছিল একুশ বছর আগে। যেদিন সোনাই তার নাড়ি  ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছিল বাইরের দুনিয়ায়।

Friday, January 4, 2019

বনে- জঙ্গলে -৫ (শিকার পর্ব) শিকারের খোঁজে


চৈত্রের নেশা ধরানো গরম দুপুর। শুকনো পাতা টুকটাক ঝরে পড়ছে পথের ধারে। নেহাত গাছপালার ছায়া আছে বলে রোদের তাতটা বোঝা যাচ্ছে না। বরং দমকা গরম হাওয়ায় ঘাম শুকিয়ে আরামই লাগছে। সূর্য পশ্চিমপারে একটু হেলে গেলেই গরম উধাও হয়ে যাবে। আর বিকেল নাগাদ যদি একটু ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয় তাহলে তো রাতে শোওয়ার সময় একটা চাদর টেনে নিতে হবে। ভাবনাগুলোকে এলোমেলো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে অলোক পথ চলছিল।

Thursday, January 3, 2019

আকাশের নীল


‘নীলা, তুইকি জানিস যে সুস্মিত - দ্য ডিবেটার তোকে খুব পছন্দ করে ?’
নীলা তখন খুব মন দিয়ে একটা প্রজাপতির ছবি তোলার চেষ্টা করছে। মিলির দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ খবরটা তাই হাওয়ায় ভেসে যায়। একটু বিরক্তই হয় মিলি। নীলাটা চিরকাল একইরকম রয়ে গেল! এবার তাই প্রিয়বান্ধবীকে ধরে ঝাঁকিয়েই   দেয় – ‘কি রে, কী বললাম, কানে গেল?’