Friday, April 29, 2022

কণ্ঠস্বর, টেলিফোন এবং.... ||দোলা সেন||

একটা ক্যাডবেরি, আর দুশো জিরেগুড়ো...

-       আরও দু-একটা জিনিস বল। নইলে ধরা পড়ে যাবি তো!

মেয়েটা গম্ভীরমুখে দোকানদারকে মেপে নেয়।

-       বাজে বকো খুব। তবে কাকিমা হলুদ আর চানাচুরও বলেছিল। যাকগে, চকলেট ছাড়ো। একটা ফোন করতে হবে।

বুড়োদা আর কিছু বলে না। নীরবে ফোনটা দেখিয়ে দেয়। মেয়েটা একমনে ডায়ালের নম্বর ঘোরায়।

ক্র্যাং ক্র্যাং.....

 

-       হ্যালো! কে বলছেন?

একটু কাঁপা গলায় – এটা কি সুভাষ মল্লিকের নম্বর?

 

-       হ্যালো?খুব ভুল না করে থাকলে তুমি ....

আর হ্যালো! হ্যালোতেই হেলে যাওয়ার দশা! কারো গলা এতো সুন্দর হয়! প্রতিটি শব্দ যেন তার নিজস্ব মাধুর্য দিয়ে গড়া! কি নিখুঁত উচ্চারণ আর বাচনভঙ্গি! মেয়েটি প্রায় ভুলেই যাচ্ছিল কেন ফোন করেছে! উল্টোদিক থেকে কিছু শব্দ সাগরের মতো আছড়ে পড়ছিল। কোনোমতে সামলে, প্রায় তুতলিয়ে বললো – মানে আজ... এখন... আপনার কাছে সুজনের থাকার কথা ছিল

 

ওপার থেকে হালকা হাসির শব্দ  - সেটাই তো বলছি। সুজন একজায়গায় আটকে পড়েছে। আমি খুব দুঃখিত।

এবার গলাটা একটু সিরিয়াস, কিছুটা মমতামাখানো – তুমি কি বিকেল চারটের পরে ফোন করতে পারবে? ও আমার কাছে বিকেলে আসবে। কিছু খবর দেবার থাকলে আমাকে বলতে পারো। আমি বলে দেব। আয়্যাম সরি।

 

মেয়েটা ততক্ষণে রেগে গেছে। নিকুচি করেছে অমন প্রেমিক আর তার সুন্দর গলার বন্ধুর। রাগটা ফোনেই আছড়ে পড়লো – ওকে বলে দেবেন গোল্লায় যেতে।

 

খট করে ফোন নামিয়ে হনহনিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। কতো ঝামেলা করে সকালে বেরোনো! বহুদিন পরে সে কলকাতায় এসেছে। কবে কিভাবে দেখা হবে, ফোনে সেটাই ঠিক করার কথা ছিল আজ। সেজন্যই ওই মক্কেলের সুভাষদার বাড়ি থাকার কথা। কাজ? হুঁঃ...

 

 ফিরতে ফিরতেও সুভাষ মল্লিকের কথাই ভাবছিল। কি রোম্যান্টিক গলা! সুজনের বদলে এ প্রেমিক হলে মন্দ হতো না! আইডিয়াটা বেশ লাগলো তার। ফিক করে হেসেও ফেলল। শুধু এই গলাটা শোনার জন্যেই ...

 

অতএব আবার বিকেল সাড়ে চারটে। পকেটখরচা থেকে বাঁচানো পয়সার জলাঞ্জলি। আবার ক্র্যাং ক্র্যাং...

 

হ্যালো...

 

.... বলছিলাম।

 

এই নাও, সুজনের সঙ্গে কথা বলো। বেচারা সেই তিনটে থেকে ফোনের পাশে বসে আছে। আমি খুব করে বকে দিয়েছি ওকে।

 

-       সরি রে! ললিতটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওকে ডাক্তারের কাছে..

 

তুই গোল্লায় যা। এখন এখানে কি করছিস?

 

যা বাবা! তুই ফোন করবি বলেই তো..

 

তোর সাথে কে কে কথা বলতে চায়? আমি তো সুভাষদার গলা শুনবো বলে ফোন করেছি।

 

মানে?

 

ওফ্ কি গলা রে। পুরো প্রেমে পড়ে যাচ্ছি!

 

হা হা হা! হো হো হো!

 

হাসছিস যে?  - মেয়েটার মাথা আবার গরম হতে শুরু করে।

 

আমি অন্য একজনের প্রেমে পড়ছি জেনে তোর হাসি পাচ্ছে?

 

না না, হাসবো কেন? (খুক. খুক, খুক) তাহলে কাল কোথায়, কখন আসবি বল। মুখোমুখি আলাপ করিয়ে দেব।

 

প্রিয়ার সামনে। বিকেল চারটে।

 

ওকে সুভাষদার বাইকেই যাব।

 

পরদিন বিকেল চারটে। মেয়েটা দাঁড়াতেই দুজন এগিয়ে এল। একটি ঝলমলে হাসিমুখের ছেলে এবং একজন অঙ্কের স্যারের মতো গম্ভীর রাশভারি চেহারার লোক। সুজন আলাপ করিয়ে দিল – এই হলো সুভাষদা। যার গলা শুনে....

 

মানে কি সুজন?

 

কিছু না সুভাষদা। ও বলছিল, তোমার গলা খুব সুন্দর।

 

খোলা গলায় হেসে ওঠেন সুভাষদা। হাসির শব্দে গলানো সোনা ঝরে।

 – গলাটা আছে বলেই ক্লাস নিতে সুবিধা হয় রে। ঠিক আছে, তোমরা গল্প করো, আমি চলি।

 

-       পছন্দ হলো?

মিলিত গলার হাসি। সুজনের মজামাখানো স্বর, একটি সুন্দর আওয়াজকে অনেক পিছনে ফেলে দেয় ওরা দুজনে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিলফুটপাথের শিমূল গাছটাও হেসে ফেলে টুপ করে দু-চারটে শিমূল ঝরিয়ে দিল।

দোলা সেন||

1 comment:

Anonymous said...

বেশ লাগলো। মিষ্টি মিষ্টি।