কান বালিশে চেপে ছেঁড়া ঘুম জোড়া দেবার আপ্রাণ চেষ্টা। বালিশে গায়ে সুতোর লেজ থাকে না। বালিশ বেচারা ঘুম সেলাই করতে গিয়ে, ফুসফুসিয়ে শব্দদের বয়ে যেতে দেয়। মেলিয়াসেরা তিন ভাই কাজে লেগে পড়ে। রুমনি বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ল। সে রাত তিনটে অবধি পড়েছে। সকাল থেকে জানলায় ঝটপটানি আর ক্ররম্ ক্ররম্ – ঘুমের দফা রফা! সঙ্গে মাইগ্রেন। সারাদিন এই চলবে। সঙ্গে মারামারিটা ফাউ। সারাদিন জানলায় বসে গুলতানি করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই যেন। অথচ অন্য পাখিদের দেখ! বেচারি চোখ ডলতে ডলতে মাইক্রোতে চায়ের জল চাপিয়ে ঢুলতে থাকে।
সিঁড়িতে
হাওয়াই চটির চটর পটর। মিত্তিরদাদু ছাদে চলেছেন। হাতে বাটি ভর্তি গম। যাওয়া মাত্র
সাদা, কালো, ছেয়ে – এমনকি ময়ূরকণ্ঠী গলা নেড়ে, ডানা ঝাপটে রাশি রাশি শান্তির
দূতেরা ছাদে নেমে পড়ে। মিত্তিরদাদুর খুশি ধরে না। একবার এদিকে গম ছেটান তো একবার
ওদিকে। পায়রারা দল বেঁধে পাক খেয়ে, ডাইনা বাঁয়া পাক মারতে থাকে।
একটু
পরে স্নেহা আন্টির পালা। প্যাটেল আঙ্কেল ছাতের সিঁড়িঘরে এক বোড়া রেশনের গম রেখে
দিয়েছেন। সেখানে পিঁপড়ে আর পোকারা সারি সারি লাইন দিয়ে সারাদিন চলতে থাকে। শীতে
রোদ পোহাতে বসলে, কুটুস কাটুস কামড়ায়। আন্টির
সঙ্গে একজন কাজের লোক। সে মুঠো মুঠো গম ছিটায়। স্নেহা আন্টি মাটির হাঁড়িতে জল
ঢালেন। পায়রাদের কোনো পক্ষপাত নেই। স্নেহা মুগ্ধ হয়ে দেখেন – যেন পরীর মেলা।
রিতিকা
জানলায় ঝিকিমিকি কাগজ পতাকার মতো সেঁটে রাখে। চোখে আলোর ঝলকানি লাগলে পায়রাদের
চিত্ত ঝলমল করে না। কাজেই তার জানলায় উৎপাত নেই। কিন্তু সাহুবাবু পায়রাদের জন্যে
ফুটোওয়ালা কলসী ঝুলিয়ে রাখেন সব জায়গায়। রিতিকা অ্যালাও করেনি বলে
অ্যাপার্টমেন্টের অনেকেই তার উপর খাপ্পা। রিতিকার সাফ কথা – তার নিজের স্পেসে সে
কাকে থাকতে দেবে বা দেবে না, সেটা তার ব্যাপার। অতএব পায়রাপ্রেমীর দল তার নানা
অসুবিধা ঘটাতে সদা তৎপর।
পায়রার
বংশ বাড়তে থাকে। বেড়েই চলে। তারা
ঘরে ঢুকে পড়তে চায়। জানলায় জানলায় তাদের সহিংস মারামারি। পিউল বল নিয়ে খেলতে খেলতে শুধোয় – পায়রাদের শান্তির দূত
বলে কেন মা? ঘরের ভিতর ছেঁড়া পালকের ওড়াউড়ি। ঝাঁট দিতে দিতে ক্লান্ত গলায় ভারতী
বলেন – ফোকটের খাবার, বিনা আয়াসের ঘর। অলস মাথায় শয়তানের
বাসা – শুনিসনি কখনো? পিউলের বাবা কাগজ থকে চোখ তুলে বললেন – পায়রাদের সুবিধের
জন্য ফ্ল্যাট প্রতি একটা চাঁদা ধার্য হয়েছে। ভারতী বললেন – সেকি? এই না সেদিন
হাঁড়ি কেনার জন্যে নিল? এমনিতেই তো দিন দিন যা খরচ বাড়ছে!
পিউলের বাবা ক্লান্ত গলায় বলেন – পায়রাতেই লক্ষ্মী লাভ হয় – জানো না? ফ্ল্যাটে
টিঁকে থাকতে হলে দিতেই হবে। আর দিন দিন এই মাশুল বাড়তেই থাকবে। আমার কথা মিলিয়ে
নিও।
*
*
*
এ
কি? আপনারা এখনো পড়ছেন? আরে মহাশয় মহাশয়ারা, এ নিতান্তই পায়রা কাহিনী। সব চরিত্র
কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কোনো রকম মিল পেলে সেটা একান্তই কাকতালীয় .. ইয়ে
পায়রাতালীয়। তার জন্য লেখক দায়ী নন।
No comments:
Post a Comment