Saturday, January 19, 2019

যে যেখানে দাঁড়িয়ে


ট্রেনে একাই যাচ্ছিলেন বিদিশা দেবী। যাচ্ছিলেন ছোট মেয়ের বাড়ী। স্বামী অতনু মারা যাবার পর, দুই মেয়ে আর এক ছেলের কাছে চারমাস করে ঘুরে ঘুরে বর্ষযাপন এখন তাঁর এই ভাল। নাহলে টানা এক বৃদ্ধাকে নিয়ে থাকতে যে সবারই বিরক্তবোধ হয়, ছেলেমেয়েদের সংযত আচরণের ফাঁক দিয়েও সেটা অনুভব করতে পারেন তিনি। তাই নিজেই এই ব্যবস্থা চালু করেছেন
জানলার ধারের সীট পেলে তিনি সাধারণতঃ বাইরের দৃশ্য দেখতেই তন্ময় থাকেন, কিন্তু আজ তাঁর চোখ বারে বারে চলে যাচ্ছে পাশে বসা সহযাত্রিনীটির দিকে। বড় চেনা চেনা লাগছে, অথচ কোথায় যে দেখেছেন, মনেই করতে পাছেন না। অস্বস্তিটা ক্রমশঃ বর্ধমান হতে, শেষ অবধি  “বলি? বলিনা। বলি?” করতে করতে বলেই ফেললেন, - আপনাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে কেন বলুন তো?
ঘুরে বসলেন মহিলাটি। পূর্ণদৃষ্টিতে বিদিশার দিকে চেয়ে ধীরে ধীরে বললেন,
-        “চেনা তো লাগবেই। আমার নাম অনিকেত।“
-       “অনিকেত? এ নাম আবার মেয়েদের হয় নাকি?”
-       “হওয়া উচিত। মেয়েদেরই তো অভিধা এটি।“
-       “কখনো শুনিনি এমন কথা!”
-       “শুনতে চাননি বলেই হয়ত শোনেননি।“
কারো নাম নিয়ে তর্ক করাটা ভারী অভদ্রতা। তাই আর কিছু না বলে আবার জানালার বাইরে মন দিলেন বিদিশানাঃ, এরকম বিদঘুটে নামের কোন মহিলাকে যে তিনি চেনেন না এ বিষয়ে তিনি এখন একশভাগ নিশ্চিত। এরকম পুরুষালী নামওয়ালা কারো সাথে কক্ষণো আলাপ হয় নি তাঁর। আর নামেরই বা কি ছিরি? ঘরের শোভা যে মেয়ে তার নাম নাকি অনিকেত – গৃহহীন? যত্তোসব!
এসব এলোমেলো ভাবনার মাঝেই ট্রেন কাঙ্ক্ষিত স্টেশনে এসে দাঁড়ায়। সহযাত্রিণীটিও নামতে নামতে ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হাসেন।
“আমার আরও একটা নাম আছে কিন্তু!”
-       “কি নাম? আগে বলবেন তো? এত চেনা লাগছিল প্রথম থেকে!”
-       “আয়না।“
চলে গেলেন অনিকেত। আর একাকী প্ল্যাটফর্মে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন বিদিশা। এবার তিনি বুঝতে পেরেছেন, অনিকেতকে কেন এত চেনা লাগছিল তাঁর।

2 comments:

suchetana said...

opurbo realisation..

Anonymous said...

বাহ্!